লাখো পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত কক্সবাজার। পাঁচ শতাধিক হোটেল মোটেলের কোনো রুম খালি নেই। শতভাগ বুকড হয়ে গেছে। অনেক পর্যটক রুম না পেয়ে ব্যাগ-লাগেজ নিয়ে যত্রতত্র ঘুরছেন। এই আমেজে খরা মৌসুমের লোকসান পুষিয়ে লাভের আশা করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। আশানুরূপ পর্যটক আসায় এই মৌসুমে শতকোটি টাকার ব্যবসায়ের আশা করছেন তারা।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কক্সবাজারে পর্যটক আসতে শুরু করে। এর পরের দিন ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবসের ছুটি। এইদিনে ঘুরে বেড়ানোর জন্য কক্সবাজারকে বেছে নিয়েছেন অনেকে। এছাড়াও টানা ছুটিতে লক্ষাধিক পর্যটক বেড়াতে আসেন এই পর্যটন শহরে।
বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) কমেনি পর্যটকের আনাগোনা। বরং সামনে শুক্রবার ও শনিবার রেখে বাড়ছে পর্যটক। সমুদ্রের হাঁটু-কোমর পানিতে চলছে পর্যটকদের স্নান উৎসব। ডাঙায় বিচবাইক আর ঘোড়ায় চড়ে সাধ নিচ্ছেন রাজা-রাণীর।
ঢাকার তেজগাঁও থেকে আসা চাকরিজীবী আনিসুল কবির বাপ্পি বলেন, প্রতিবছর পর্যটন মৌসুমে কক্সবাজার বেড়াতে আসি। আর এখানে বেড়াতে এলে সেন্টমার্টিন অবশ্যই যাওয়া হয়। তবে এবার কক্সবাজার থেকে মাত্র দুটি জাহাজ সেন্টমার্টিন যাওয়ায় আমরা যেতে পারিনি। সৈকতে সময় ভালো যাচ্ছে। তবে গতবারের তুলনায় কম কোয়ালিটির রুমে ভাড়া বেশি দিতে হয়েছে।
রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী থেকে আসা শিক্ষার্থী আনিকা তাবাচ্ছুম বলেন, অনার্স ২য় বর্ষের পরীক্ষা শেষে আব্বু আম্মুর সঙ্গে ঘুরতে এলাম প্রিয় জায়গা কক্সবাজারে। তবে প্রতিবারই একই জিনিস দেখি। রাস্তাঘাট সুন্দর হয়েছে। বিচেও ব্যতিক্রম কিছু বিনোদনের ব্যবস্থা করলে আরো ভালো লাগতো।
এদিকে রুম বুক না করে অনেকেই বাড়ি ফিরে যাওয়ার চিত্র দেখা গেছে। কলাতলী ডলফিন মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রাম থেকে আসা দুটি পরিবার বাড়ির উদ্দেশ্যে ফিরে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে জয়নাল আবেদিন নামের ব্যক্তি বলেন, অনলাইনে রুম বুকিং করতে গিয়ে খালি পাইনি। ভেবেছিলাম মধ্যম শ্রেণির কোনো হোটেলে রুম পাবো। কিন্তু এখানে এসে দেখি কোথাও রুম খালি নেই। চট্টগ্রাম যেহেতু কাছে। চলে যাচ্ছি। পর্যটক কমে গেলে রুম বুকিং করেই আসবো আবার।
তবে যারা রুম পেয়েছেন তারা অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের খপ্পরে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া ইজিবাইক ও সিএনজি চালিত অটোরকিশা চালকদের হয়রানির কথা জানিয়েছেন অনেক পর্যটক। কম দূরত্বের জায়গায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে অতিষ্ঠ পর্যটকরা। এ ব্যাপারে তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, এবার প্রচুর পর্যটক আসায় ব্যবসা ভালো হচ্ছে তাদের। তাা আশা করছেন বিগত সময়ের ক্ষতি পুষিয়ে লাভের মুখ দেখতে পারবেন।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, কক্সবাজারে পাঁচ শতাধিক হোটেল মোটেল গেস্টহাউস ছাড়াও রেস্তোরাঁ, শামুক, ঝিনুক, শুটকি, বার্মিজ পণ্য বিক্রিসহ অন্যান্য মিলে ফেব্রুয়ারি মাসে শতকোটি টাকার ব্যবসা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব ব্যবসায়ীরা পর্যটকদের আন্তরিকভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, এবার অন্তত সন্তোষজনক ব্যবসা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় জেলা প্রশাসন মাঠে রয়েছে। এছাড়াও পর্যটকদের সেবা দিতে বিচকর্মীদের টহল জোরদার রয়েছে। এ পর্যন্ত কোনো পর্যটক অভিযোগ দেননি। যদি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ পাই তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক আপেল মাহমুদ বলেন, সার্বক্ষণিক পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করে যাচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। প্রতিটি পয়েন্টে পয়েন্টে ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল রয়েছে। তারা সবকিছু তদারকি করছে।