কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন উৎসব কেন্দ্র করে সনাতন ধর্মাবলম্বীর পাশাপাশি নানা ধর্মের মানুষের সরব উপস্থিতি বলে দিচ্ছে, এ যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মহামিলনে পরিণত হয়েছে। সৈকতের ২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শুধু মানুষ আর মানুষ।
রোববার (১৩ অক্টোবর) বিকেলে সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিমা বিসর্জন উৎসব। দেবী মাকে শেষ বিদায় জানাতে পর্যটকসহ প্রায় তিন লাখ মানুষের উপস্থিতিতে প্রতিমা বিসর্জন উৎসব সম্পন্ন হয়।
আয়োজকরা জানান, প্রতিবছর বিজয়া দশমীতে দেবী দুর্গার প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে লাখো মানুষের ঢল নামে। এই বছরও অন্তত ৩ লাখ মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে সমুদ্র সৈকত। শুধু লাবণী পয়েন্টে এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা অন্তত ২০০ প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া একই সময়ে রামুর বাঁকখাল নদী, চকরিয়ার মাতামুহুরী, টেকনাফের সাগর ও নাফনদী, উখিয়ার ইনানী সৈকত ও রেজুনদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) উদয় শংকর পাল বলেন, জেলার ৯টি উপজেলায় ৩২১টি মণ্ডপে সুষ্ঠু পরিবেশে পূজা সম্পন্ন হয়। এর মধ্যে ১৫১টি প্রতিমা ও ১৭০টি ঘটপূজা।
আজ বিকেলে মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে একযোগে সব প্রতিমা সাগরে বিসর্জন দেওয়া হয়। দেশের সর্ববৃহৎ সৈকতের প্রতিমা বিসর্জন উৎসব শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করার মাধ্যমে এবারও আমরা প্রমাণ করতে চাই কক্সবাজার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য স্থান।
রামু থানার ওসি ইমন কান্তি চৌধুরী বলেন, রামু থেকে কড়া নিরাপত্তায় নাইক্ষ্যংছড়িসহ ৭টি প্রতিমা বিসর্জনের জন্য কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পাঠানো হয়েছে। বাকিগুলো বাঁকখালী নদীতে বিসর্জন দেওয়া হবে। ওখানেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্তক অবস্থানে রয়েছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিওনের সহকারী পুলিশ সুপার আবুল কালাম বলেন, পর্যটক ও পূজারীদের নিরাপত্তায় আমাদের কন্টোল রুম চালু করা হয়েছে। আমাদের সঙ্গে র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের সদস্যরা কাজ করছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, দেশের বৃহত্তম প্রতিমা বিসর্জন উৎসব হয়ে থাকে কক্সবাজার সৈকতে। এতে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। এখন কক্সবাজার ভ্রমণ করছেন লাখো পর্যটক। সবার নজর থাকে কক্সবাজারের প্রতিমা বিসর্জন উৎসবের দিকে। তাই এখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন করতে কঠোর নিরাপত্তা গ্রহণ করা হয়েছে। সৈকতের লাবনী পয়েন্টের উন্মুক্ত মঞ্চে রোববার দুপুরের পরপরই বিভিন্ন মণ্ডপ থেকে আনা হয় প্রতিমা। আড়াইটা থেকে শুরু হয় বিজয়া সম্মেলন। বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত সাগরে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। এবার পূজা নির্বিঘ্ন করতে প্রশাসন চার স্তরের নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলেছে।
ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, যানজট নিরসনে শহরের বাইরের উপজেলাগুলোর পূজামণ্ডপের প্রতিমা কলাতলী ডলফিন মোড় হয়ে এবং শহরের অভ্যন্তরের প্রতিমাগুলো প্রধান সড়কের হলিডে মোড় হয়ে সৈকতের লাবনী পয়েন্টের বিসর্জন অনুষ্ঠানস্থলে আসবে। প্রতিমাগুলো মণ্ডপ থেকে ট্রাকযোগে আনার সময় আনসার সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিমাবোঝাই ট্রাকবহরে যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে জন্য পুলিশের টহল দল তৎপর ছিল । সৈকতের প্রবেশমুখ, প্রতিমা বহনের সড়ক ও মোড়ে সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ সাদা পোশাকে লোকজনের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।