শ্রীলঙ্কার কাছে হারের পর ছিল না বিশ্রামের কোনো সুযোগ। ম্যাচ শেষ হওয়ার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই বাংলাদেশ দল উড়াল দিয়েছে পাকিস্তানের উদ্দেশে। লাহোরে আজ বাংলাদেশের জন্য আফগানিস্তান ম্যাচ বাঁচা-মরার। এশিয়া কাপে টিকে থাকতে জয়ের কোনো বিকল্প নেই আজ । শুধু ম্যাচ জিতলেই হবে না, বাংলাদেশকে তাকিয়ে থাকতে হবে আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কা লড়াইয়ের দিকেও।
বাংলাদেশের এমন পরিস্থিতিতে বেশ সতর্ক অবস্থানে আছে আফগানরা। শুক্রবার আফগান কোচ জোনাথান ট্রট বলেন, ‘আমরা জানি এটা (বাংলাদেশ ম্যাচ) কঠিন হতে যাচ্ছে।’ তাতেই আভাস পাওয়া যাচ্ছে, মাঠে বাংলাদেশকে একবিন্দু ছাড় দেবে না আফগানরা।
দীর্ঘ তিন বছর পর পাকিস্তানের মাঠে খেলতে নামবে বাংলাদেশ। এর আগে ২০২০ সালে সবশেষ পাকিস্তান সফরের অভিজ্ঞতা আছে টাইগারদের। অন্যদিকে আফগানিস্তানের জন্য কন্ডিশন থাকবে তাদের পক্ষে। কারণ, বেশিরভাগ আফগান ক্রিকেটারের পাকিস্তানের কন্ডিশন বেশ ভালোভাবেই চেনা। ফলে আফগানিস্তান এই কন্ডিশন থেকে পাবে বাড়তি সুবিধা।
অন্যদিকে প্রথম ম্যাচে বাজে হারের দুঃস্মৃতির সঙ্গে অপরিচিত কন্ডিশন- দুইয়ে মিলে ব্যাকফুটে থাকবে বাংলাদেশ। ব্যাকফুটে থাকা সাকিব-শান্তদের আরেকটু পিছিয়ে দেবে সম্প্রতি আফগানদের কাছে ওয়ানডে সিরিজ হারের দুঃস্মৃতি।
তবে মাথায় এত বেশি চিন্তা নিয়ে অবশ্য আফগানদের বিপক্ষে মাঠে নামতে চান না নাজমুল হোসেন শান্ত। তার চিন্তা শুধু জয়। তিনি বলেন, ‘পরের ম্যাচ আমাদের জিততে হবে। আমরা জেতার জন্য খেলব। জেতার পর বোঝা যাবে কী সমীকরণ দাঁড়াবে বা কী হবে।’
শান্তর কথাতে স্পষ্ট ম্যাচ জয়ের জন্য কতটা মরিয়া হয়ে আছে বাংলাদেশ। তবে মরিয়া হয়ে থাকার পর বাংলাদেশ শিবিরে নেই স্বস্তি। জ্বরের কারণে নিয়মিত ওপেনার লিটন দাসের অনুপস্থিতিতে লঙ্কানদের বিপক্ষে ‘নতুন’ ওপেনিং জুটি দেখা গিয়েছিল। দুই তরুণ ওপেনারের কেউই দিতে পারেননি আস্থার প্রতিদান। বেশি হতাশ করেছেন বোধহয় নাঈম শেখ। ভালো শুরুর পর বাজে শটে ফেরেন প্যাভিলিয়নে।
শুরুটা ভালো না হওয়ায় ‘নতুন’ জুটিতে বদল আনার সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশ শিবিরে। সেক্ষেত্রে নাঈম শেখ একাদশ থেকে বাদ পড়তে পারেন। একাদশে জায়গা মিলতে পারে হঠাৎ করে ডাক পাওয়া এনামুল হক বিজয়ের।
ওপেনিংয়ে পরিবর্তন আনার আরেকটি কারণ টপ অর্ডারে চারজন বাঁহাতি ব্যাটার। আফগান পেসার ফজলহক ফারুকিকে সাম্প্রতিক সময় সামাল দিতে ব্যর্থ বাংলাদেশ। লাহোরে আজকের ম্যাচে শুরুতে ফারুকির পেস মোকাবেলাই হবে বাংলাদেশ দলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
আজকের ম্যাচে ব্যাটিংয়ে শক্তি বাড়ানোর পরিকল্পনা নিলে বাংলাদেশ একাদশে সুযোগ পেতে পারেন শামীম পাটোয়ারী। সাত নম্বরে শেখ মাহেদি হাসানের জায়গায় খেলতে পারেন তিনি।
তিন পেসার নিয়ে একাদশ সাজানো বাংলাদেশের পেস বোলিং ইউনিটেও আসতে পারে পরিবর্তন। মুস্তাফিজুর রহমানের জায়গায় হাসান মাহমুদকে খেলাতে পারে বাংলাদেশ। তবে একাদশে বদলের চিন্তা করলেও এশিয়া কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে হারের পর এখনই নিজেদের সবহারা ভাবতে রাজি নয় বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে জয় বদলে দিতে পারে পুরো দলের আত্মবিশ্বাস।
বাংলাদেশ দল যখন পরিবর্তনের চিন্তায় মগ্ন, আফগানিস্তান শিবিরে সে ধরনের কোনো ভাবনা নেই। ইনজুরি সমস্যা না থাকায় রশিদ খান-মোহাম্মদ নবির মতো গুরুত্বপূর্ণ সব ক্রিকেটারকে পাবে আফগানরা। তাদের পেস আক্রমণে থাকবেন ফজলহক ফারুকি, সালিম শফির মতো পেসাররা। এ ছাড়া করিম জানাত, রহমানউল্লাহ গুরবাজ কিংবা মুজিব উর রহমানরাও নেবেন বাংলাদেশের কঠিন পরীক্ষা।
ওয়ানডের পরিসংখ্যানেও বাংলাদেশ-আফগানিস্তান প্রায় সমানে সমান। দুই দলের ১৪ দেখায় বাংলাদেশের জয় ৮ বার। বিপরীতে আফগানরা জিতেছে ৬ ম্যাচে। সামগ্রিক লড়াইয়ে এগিয়ে থাকলেও এশিয়া কাপে আফগানদের বিপক্ষে খানিকটা পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এর আগে এশিয়া কাপে দুই দলের লড়াইয়ে তিন ম্যাচে আফগানরা জয় পেয়েছে দুইবার। একবার জয়ের হাসি বাংলাদেশের।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ মোটেও স্বস্তিদায়ক অবস্থায় নেই। আজ চিত্রটা বদলাবে কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন। সমীকরণ সহজ- আজ না জিতলে কলম্বোতে ফিরতি ফ্লাইট বদলে বাংলাদেশ দলকে ফিরতে হবে ঢাকায়।
এই দল কলম্বো ফিরছে নাকি ঢাকায়- সেই উত্তর মিলবে ম্যাচ শেষে।