আপনার টেবিলে হঠাৎ একটি তেলাপোকা এসে পড়ল। আপনি দেখেই চিৎকার দিয়ে বাড়ি মাথায় তুললেন। অথবা তেলাপোকা উড়ে এসে শরীরে বসতেই হাত-পা ছুড়তে শুরু করলেন। এরপর পড়িমরি করে দিলেন ছুট। যারা তেলাপোকা বা পোকামাকড় দেখে ভয় পান, একে এন্টোমোফোবিয়া বলে। বলাবাহুল্য মেয়েদের ক্ষেত্রে তেলাপোকা-ভীতি বেশি দেখা যায়। কিন্তু এর কারণ কী?
পৃথিবীতে যত প্রজাতির তেলাপোকা রয়েছে তার মাত্র এক শতাংশ বাস করে মানুষের সঙ্গে। এরা কামড়ালে কেউ মারা যায় না। কিংবা কোনো জটিল রোগ শরীরে ছড়ায় না। তারপরও তেলাপোকা দেখে ভয় পাওয়াটা যেন স্বাভাবিক! শুধু মেয়েরা নয়, অনেক ছেলেও তেলাপোকা দেখে ভয় পায়। বিষয়টিকে বিজ্ঞানের ভাষায় ক্যাটসারিডাফোবিয়া বলে। আগে অবশ্য একে পোকামাকড়ের ভয় হিসেবে এন্টোমোফোবিয়া বলা হতো। যা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। তবে মনে রাখতে তেলাপোকার প্রতি মানুষের ভয় থাকলেই সেটি ক্যাটসারিডাফোবিয়া নয়। তেলাপোকা-ভীতি যখন দীর্ঘদিন ধরে কেউ পোষণ করে এবং অতিরিক্ত ভয় করে তখনই সেটি ক্যাটসারিডাফোবিয়া মনে করা হয়।
ইউনিভার্সিটি অয় ওয়াইওমিংয়ের ইকোলজির অধ্যাপক জেফ্রি লকউড তেলাপোকা-ভীতি প্রসঙ্গে বলেন, ভয় এবং বিরক্তি মানুষের সার্বজনীন দুটি আবেগ। একটি হঠাৎ বিপদ নির্দেশ করে অন্যটি রোগবালাইয়ের সংকেত দেয়।
এই বিশেষজ্ঞের মতে, তেলাপোকা মানুষের মনে ভয় এবং বিরক্তি দুই অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। তেলাপোকার শরীরের চটচটে তৈলাক্ত ভাব, রাতের আঁধারে গায়ের উপর হাঁটা কিংবা পায়ের নিচে পড়ে বেরিয়ে আসা ইউরিক এসিড বিরক্তিকর মনে হতেই পারে।
এই বিশেষজ্ঞ আরও জানান, সাধারণত বিভিন্ন রোগের কারণেই তেলাপোকাকে ভয় পেতে শুরু করে মানুষ। শিশুরা দারুণ পর্যবেক্ষণ নিয়ে তেলাপোকা বা অন্য সব পতঙ্গ দেখে বড় হলেও শিশুদের মনে এই বোধ জন্মায় যে এর থেকে রোগ হতে পারে। ফলে মনের মধ্যে ভয় বাসা বাঁধে। তেলাপোকা এলার্জির জীবাণু বহন করে এবং এর থেকে শ্বাসকষ্টের জীবাণু ছড়ায়।
তেলাপোকার প্রতি ভয় মানুষের পরিবার থেকেও হতে পারে। কোনো শিশু যখন তার মাকে তেলাপোকা দেখলেই ভয়ে চিৎকার করতে দেখে তখন সে নিজেও তেলাপোকা ভয় করবে। এই প্রাণীর বিদঘুটে পা এবং দেহাকৃতি তার ভয়ের অন্যতম কারণ।
অনেকের মতে, মেয়েরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করে কিন্তু তেলাপোকা বাথরুম বা অন্যান্য নোংরা জায়গায় লুকিয়ে থেকে হঠাৎ সামনে চলে আসে। এতে যে কেউ অস্বস্তি অনুভব করতে পারেন। এবং এটি এড়িয়ে যেতে চাইতে পারেন। মেয়েরা তেলাপোকো ছাড়াও মাকড়সা ভয় পায় এবং এর বড় কারণ অস্বস্তি।