জীব ও পরিবেশ— একে অপরের উপর নির্ভরশীল। পরিবেশ ও প্রকৃতির কারণেই মহাবিশ্ব শিরদাঁড়া খাড়া করে এগিয়ে চলে। তবে এখন পর্যন্ত পৃথিবী ছাড়া এমন কোনো গ্রহের সন্ধ্যান মেলেনি যেখানে প্রাণীর বসবাসের উপযোগী। আর এটির কারণ হচ্ছে পরিবেশ।
পরিবেশ শুধু প্রতিকূলতা থেকেই নয়, মানুষের সাথে অন্যান্য বিষয়ের ভারসাম্যও রক্ষা করে। কারণ, মানুষ পরিবেশের মধ্য দিয়েই বেড়ে ওঠে। মানুষ যে পরিবেশের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠে, তার স্বভাব চরিত্রেও সেই পরিবেশের ছাপ ফুটে উঠে। বাংলাদেশ নদীমাতৃক ও সবুজ-শ্যামল একটি দেশ। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রকৃতি ও পরিবেশ আমাদের জীবন গঠনে সহায়তা করে চলে। এই দেশের নদ-নদী, বন-বিহার, পর্বতমালা রক্ষা করার দায়িত্ব তাই আমাদেরই।
কিন্তু, আমরা কি তা করছি? করছি না।
নদীকে আমরা কত কাজেই না ব্যবহার করে থাকি। কত না কাজে আসে এই বহতা নদী। নদী আমাদের প্রাণ। নদী আমাদের ধমনী। অথচ আমরাই সেই নদীতে ব্যবহার্য সব পদার্থ ফেলে করছি নোংরা। সদরঘাটের বুড়িগঙ্গা নদী পারাপার করতে গেলেই নাকে রুমাল চাপতে হয়! নয়নাভিরাম হাতিরঝিলের পাশ দিয়ে হাঁটা দায় দুর্গন্ধে!
বেশিরভাগ মানুষ শহরমুখী হওয়াতে বাড়ছে যানবাহন ও তার কালো ধোঁয়ার পরিমাণ। বন উজাড় করে আমরা দালানকোঠা ও শিল্প কারখানা গড়ে তোলার প্রতিযোগিতায় নেমেছি। এতে করে পশু-পাখি হারাচ্ছে তার বাসস্থান। আমরা পাচ্ছি না মুক্ত বাতাস, ছায়া কিংবা অক্সিজেন। বায়ুমণ্ডলে শুধু কার্বন ডাই অক্সাইড মিশে তৈরি হচ্ছে বিষাক্ত পদার্থ যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকারক হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।
গবেষকরা বলছেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ ভালো থাকলেই ভালো থাকবে সামাজিক পরিবেশ। সুন্দর ও প্রফুল্ল থাকবে মন। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা না হওয়ার কারণে বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মহামারী। এসব বিষয় মাথায় রেখে অন্তত আমাদের সুন্দর ও সুস্থ জীবনের জন্য হলেও আসুন আমরা পরিবেশ রক্ষা করি। যেখানে সেখানে আবর্জনা না ফেলি। গাছ লাগাই, নিজে সচেতন হই আর অন্যকে সচেতন করি। এই সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে আমাদের নিজেদের স্বার্থেই।
সচেতনতার সাথে সাথে রাষ্ট্রীয় একটি দায়িত্ব বাড়ালে মনে হয় পরিবেশ আরো সুন্দরভাবে গড়ে উঠতে পারতো। যেমন: পরিবেশ-বান্ধব পুলিশ থাকলে হয়তো আমাদের পর্যটন এলাকাগুলো এত নোংরা হয়ে উঠতো না। সেসব স্থানে প্লাস্টিক বর্জ্য ও ময়লা পদার্থের স্তুপ গড়ে উঠতো না। জায়গাগুলো এতটা অপরিষ্কার হয়ে পড়তো না।
পর্যটন এলাকাগুলোয় কিছু পুলিশকে যদি এই দায়িত্বে কর্মরত রাখা যায়, আইনের কড়াকড়ি আরোপ করা যায়, ময়লা ফেলা নিয়ে আইন করা যায় বা জরিমানা ধার্য করা যায়— তাহলে আমরা হয়তো একটি পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন সুন্দর বাংলাদেশ পেতে পারতাম।
আসুন, আমরা যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলে নিজেদের জন্যই সুন্দর একটি পরিবেশ গড়ে তুলি। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সুন্দর আর স্বাস্থ্যকর পরিবেশের একটি দেশ গড়ে তুলি। কারণ, পরিবেশ না বাঁচলে আমরা বাঁচবো না।
লেখক: শিক্ষক, বংশাল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়