আর কোনও প্রকল্পে নিজের নাম ব্যবহারের অনুমোদন দেবেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নিয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি। সভায় একটি প্রকল্পের শিরোনাম থেকে তার নাম পরিবর্তন করার নির্দেশ দিয়ে ও ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে কোনও প্রকল্পে তার নাম যুক্ত হলে তিনি তার অনুমোদন দেবেন না।
আজ বৃহস্পতিবার (৯ মে) রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকায় এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত চলতি বছরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) নবম সভায় সভাপতিত্বকালে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিৎ কর্মকার। ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যগণ ও সংশ্লিষ্ট সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
সত্যজিৎ জানান, খুলনার শেখ হাসিনা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন ও মৌলিক অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৮৭৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকার প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তার পর্যবেক্ষণে দুটি বিষয় উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলো– প্রথমে প্রকল্পের শিরোনাম থেকে তার নাম পরিবর্তন করা এবং একটি ম্যুরাল নির্মাণের খরচ অন্য কোনও খাতে ব্যয় করা।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চায়না এইড প্রকল্পের জন্য ২৮৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকার অনুমোদনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকল্পের জন্য নতুন নাম নির্বাচন করুন। এ বিষয়ে উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে আলোচনা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেন তিনি।
৫৫৬৩ কোটি টাকার ১০ প্রকল্প
পরিকল্পনা সচিব বলেন, আজ একনেক বৈঠকে মোট ৫ হাজার ৫৬৩ দশমিক ৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ের মোট ১০টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। মোট প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে, বাংলাদেশ সরকারের অংশ থেকে ৫ হাজার ২০৩ দশমিক ২১ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সহায়তা হিসাবে ৩৬০ দশমিক ৪৭ কোটি টাকা আসবে। অনুমোদিত ১০টি প্রকল্পের মধ্যে ৮টি নতুন এবং ২টি সংশোধিত প্রকল্প।
সভায় অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলি হলো– ১৪৪.০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে প্ল্যাটফর্মের ভিত্তিতে পরিসংখ্যান পরিষেবার সক্ষমতা বৃদ্ধি, ১১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে পিরোজপুর ও ঝালকাটি জেলায় গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, ১০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশাল জেলায় গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, ৮১.৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে টেক্সটাইল ও লেদার সেক্টরে (স্টাইল) স্থায়িত্ব, দ্বিতীয় সংশোধিত ৫২৭.৭৭ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয়ে, ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের উৎপাদন পদ্ধতিকে ভেজা থেকে শুষ্ক প্রক্রিয়ায় রূপান্তর করা, নতুন অত্যাধুনিক নির্মাণে ৩৩৪.৪৬ কোটি ব্যায়ে বিদ্যমান ঢাকা জেলা সার্কিট হাউস বিল্ডিংয়ের পরিবর্তে সার্কিট হাউস বিল্ডিং, ২২৩.০২ কোটি টাকা ব্যায়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নবগঠিত (৬৩বিজিবি) ব্যাটালিয়নের জন্য বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ ও আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্ট (বিজিবি) ও ৬.৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৃতীয় সংশোধিত আরবান রেজিলিয়িন্স প্রজক্ট (ইউআরপি): ডিডিএম অংশ।
সরকারি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
শেয়ারের সরবরাহ বাড়িয়ে দেশের শেয়ার বাজারকে আরও জোরদার করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্ভাবনাময় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগ (এসওই) বা সরকারি সংস্থা ও সরকারি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
সত্যজিৎ কর্মকার বলেন, প্রধানমন্ত্রী অর্থ বিভাগ ও অর্থসচিবকে শেয়ারবাজারে এসওই এবং সরকারি কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলেছেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে সত্যজিৎ বলেন, প্রধানমন্ত্রী এসওইগুলোর নাম নির্দিষ্ট করেননি, তবে অর্থ বিভাগ এবং অর্থ সচিবকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার আগে যথাযথ যাচাই-বাছাই করে এসওই এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোকে নির্বাচন করতে বলেছেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, এতে ওইসব সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সক্ষমতা বাড়বে। কারণ তারা শেষ পর্যন্ত তাদের ব্যয় কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে। এটি প্রতিযোগিতার মনোভাবও তৈরি করবে এবং তারা (এসওই) তাদের নিজস্ব আয়ের ওপর ভিত্তি করে প্রকল্প গ্রহণ করতে সক্ষম হবে। সরকারি উদ্যোগ এবং সংস্থাগুলোকে পুঁজিবাজারে এবং এইভাবে প্রাইভেট কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতার জন্য নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হবে যাতে তারা তালিকাভুক্ত হতে পারে।
সম্পন্ন হবে রেকর্ড সংখ্যক প্রকল্প
প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পাওয়া কিছু নির্দেশনা তুলে ধরে সত্যজিৎ বলেন, প্রয়োজনীয় তহবিলসহ প্রায় সব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পূর্ববর্তী নির্দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ৩৩৯টি প্রকল্পের মধ্যে রেকর্ড সংখ্যক ৩৩৪টি প্রকল্প এই অর্থবছরের (২০২৩-২৪ অর্থবছর) মধ্যে সম্পন্ন হবে। যৌক্তিক কারণে বাকি পাঁচটি প্রকল্প চলতি অর্থবছরের মধ্যে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নদী ও খালের ওপর সঠিক উচ্চতায় সেতু নির্মাণ করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকতে বলেছেন যাতে নদীতে নৌযানগুলো নির্বিঘ্নে চলাচলের পাশাপাশি স্বাভাবিক পানি প্রবাহ ব্যাহত না হয়।
পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পের সময়সীমা বাড়ানোর জন্য তার শর্তাবলী শিথিল করছে কিনা– জানতে চাইলে সত্যজিৎ বলেন, নির্বাহক সংস্থাগুলো থেকে বারবার আবেদন করা সত্ত্বেও, পরিকল্পনা কমিশন সময়সীমা বাড়ায়নি। যার ফলে রেকর্ড সংখ্যক ৩৩৪টি প্রকল্প চলতি অর্থবছরেই শেষ হবে।
এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, যতদিন প্রকল্পগুলো বিলম্বিত হবে, তত বেশি সময় চলে যাবে। এ কারণেই আমরা প্রতিটি প্রকল্প হাতে নেওয়ার আগে যাচাই-বাছাই করে দেখি। কিন্তু তা সত্ত্বেও অনেক সময় অনিবার্য পরিস্থিতির কারণে প্রকল্পের নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক বৈঠক (ছবি: ফোকাস বাংলা)
ভূমি অধিগ্রহণে বিলম্বের কারণে প্রায়শই প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হয় উল্লেখ করে সালাম বলেন, সরকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়ার সময় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
প্রকল্প পরিচালকদের আশপাশের বিদ্যমান সমস্যাগুলো খুব শিগগিরই সমাধান করা হবে– উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো দ্রুত সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চালালে সম্ভাব্য সমস্যা ও সম্ভাবনাগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করা যাবে যা উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন নির্বিঘ্ন করতে সহায়ক হবে।
মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার সাম্প্রতিক অবমূল্যায়ন বিদেশি সাহায্যপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলোতে প্রভাব ফেলবে কি না সে সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিকল্পনা সচিব বলেন, তাৎক্ষণিক প্রভাব নির্ধারণ করা খুবই কঠিন।
বৈঠকে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা এবং পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা ও সংশ্লিষ্ট সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। সূত্র: বাসস।