হেভিওয়েট প্রার্থীদের আসন লক্ষ্মীপুর-২। এটি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্বাচনী এলাকা হিসেবে পরিচিত। স্বাধীনতার পর থেকেই এখানে উপনির্বাচন ছাড়া কখনোই জয় পায়নি আওয়ামী লীগ। এ কারণে আসনটি আগে থেকেই বিএনপির ভোটব্যাংক হিসেবে পরিচিত।
তবে বিএনপির দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে তাদের দুর্গ দখল করে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ জন্য আসনটি ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রমে সোচ্চার হয়েছে আওয়ামী লীগ।
টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সুবাদে এই ভোটব্যাংকে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা গেছে। বিএনপির নারী ভোটারদের বড় একটা অংশ জামায়াতে ইসলামীর দিকে ঝোঁকা। তবে সাংগঠনিক দুর্বলতায় বিএনপি এখানে এখন আর আগের মতো শক্ত অবস্থানে নেই।
বিগত নির্বাচনগুলোতে এ আসনের নারী ভোটারদের প্রতি বিএনপির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ থাকলেও জামায়াতের কারণে এখন তা নাজুক অবস্থায় ঠেকেছে।
আওয়ামী লীগের টানা তিন মেয়াদের ক্ষমতার সময়ে একবার বিপুল ভোটে জিতেছেন বিএনপির প্রার্থী আবুল খায়ের ভূঁইয়া। দুবার আওয়ামী লীগ জোটগত কারণে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আসনটি। এর মধ্যে একবার বিনা ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ নোমান। দ্বিতীয়বার তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও তিনি রহস্যজনক কারণে ভোট গ্রহণের এক সপ্তাহ আগে প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ান।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে জয়ী হন স্বতন্ত্র প্রার্থী বহুল আলোচিত ও কুয়েতে দণ্ডিত কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল। তিনি দণ্ডিত হওয়ার পর আসনটি শূন্য হলে ২০২১ সালের উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন।
জেলার সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর থেকেই নুর উদ্দিন চৌধুরী এলাকায় ভোটার ও নেতা-কর্মীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। তিনি ছাড়াও এ আসনে এসেনসিয়াল ড্রাগসের এমডি ডা. এহসানুল কবির জগলুলও তৎপর রয়েছেন।
নুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, শুধু লক্ষ্মীপুর-২ নয়, পুরো জেলাতেই আওয়ামী লীগ এখন সাংগঠনিকভাবে অনেক শক্তিশালী। ব্যাপক উন্নয়ন ও ভোট বাড়ায় এখানে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয় পাবে।
বিএনপি থেকে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য আবুল খায়ের ভূঁইয়া ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাহাব উদ্দিন সাবু। তবে আবুল খায়ের ভূঁইয়া নিয়মিত নেতা-কর্মীদের খোঁজখবর ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে মাঠে বেশি তৎপরতা চালাচ্ছেন। সে হিসেবে বিএনপি নির্বাচনে গেলে আবুল খায়ের ভূঁইয়াই এখানে মনোনয়ন পাবেন—এমনটাই দাবি দলটির নেতা-কর্মীদের।
আবুল খায়ের ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা এই মুহূর্তে আগামী নির্বাচনের কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা বা মন্তব্য করতে চাই না। এখন একটাই কাজ—এই সরকারের বিদায়।’
অন্যদিকে জোটগতভাবে ১৪ দলীয় জোট নির্বাচন করলে আবারও এখানে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বিগত দিনে দলটির প্রার্থী সাবেক এমপি মোহাম্মদ নোমান প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ানোয় দলটির প্রতি আস্থারও সংকট তৈরি হয়ে আছে। সবকিছু মাথায় রেখেই জাতীয় পার্টিকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন নোয়াখালী জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য এবং রায়পুর উপজেলা কমিটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বোরহান উদ্দিন আহমেদ মিঠু।
রায়পুর উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আনোয়ার হোসেন বাহার বলেন, ‘আমাদের একক প্রার্থী হিসেবে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছেন বোরহান উদ্দিন আহমেদ মিঠু। জোটগতভাবে আমরা এ আসনটির দাবি জানাব।’
এ আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও তৎপর। এ আসন থেকে একক প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন দলটির জেলা আমির এস ইউ এম রুহুল আমিন ভূঁইয়া। প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ না হলেও ঘরোয়া রাজনীতিতে তিনি সরব রয়েছেন। তাঁর পক্ষে মাঠে সাংগঠনিক তৎপরতা চালাচ্ছেন দলটির দায়িত্বশীল নেতা-কর্মীরা।
এস ইউ এম রুহুল আমিন ভূঁইয়া বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ছাড়া আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না। এরপরও খালি মাঠে কাউকে এককভাবে গোল দিতেও দেওয়া হবে না। এ জন্য আমরা সব রকমের প্রস্তুতিই নিচ্ছি। আমাদের দলও আগের চেয়ে এখন সাংগঠনিকভাবে সুসংগঠিত।’