শিক্ষা ও পন্য এক জিনিস নয়। সেবা ও ব্যবসায়ীক দৃষ্টি একটি অপরটির থেকে সম্পূর্ণ আলাদা । একটির সঙ্গে মানসিক্তা অপরটির সাথে মুনাফা জড়িত। দুঃখজনক হলেও সত্য যে , দিন দিন একদল বিক্রেতা শিক্ষকের ভান করে শিক্ষাকে পন্য হিসেবে বিক্রয় করছে। তাদের কাছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ক্রতা বা খদ্দের। শিক্ষাকে নিয়ে এই যে, ক্রেতা – বিক্রেতা সম্পর্ক-এ বিতর্কের প্রথম সূত্রপাত হয় প্রাচীন গ্রিসে। একদল পন্ডিত বিশেষ্করে সোক্রেটিস মনে করতেন , শিক্ষার লক্ষ হলো জ্ঞান অর্জন । যারা অর্থ উপার্জনের জন্য পড়িয়ে থাকেন তাদের তিনি শিক্ষার বারবনিতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ।
অপরদিকে প্রোটাগোরাস পড়াশোনার জন্য অতি মজুরি আদায় কে অন্যয় বলে মনে করতেন না। অন্য পন্ডিত এরিস্টিপাস মনে করতেন যে, বিদ্যার উদ্দেশ্য দারিদ্রতা নয়, ঐশর্যও নয়। এ দুটির মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে । পন্ডিতদের মধ্যে বিভিন্ন চিন্তা ধারা থাকলেও এ দেশের প্রেক্ষাপটে বলা যায় যে , সক্রেটিস ও এতিস্টিপাস এর চিন্তা পরিত্যাজ্য । তাদের চিন্তার বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় শুধু বক্তৃতা ও কাগজপত্রে। বর্তমানে প্রোটাগেরাস এর মতামতই সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য ।অনেক শিক্ষক রয়েছেন যারা অর্থ উপার্জন বা বেকারত্ব মোচনের জন্য শিক্ষকতা কে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন , সেবা বা জ্ঞান সাধনার জন্য নয় ।
নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ স্টিগলিৎজের সুস্পষ্ট বক্তব্য হলো , মানুষ লাভের আশায় জ্ঞান সাধনা করেন না । সক্রেটিস কোনো লাভের জন্য দর্শনের চর্চা করেছিলেন ? কার্ল মারক্স বিশাল জ্ঞান সাদক হওয়া সত্ত্বেও চরম দারিদ্রের মধ্যে দিনাতিপাত করেছেন। জ্ঞান সাধকরা জ্ঞান অর্জন করেন সৃষ্টি সুখের উল্লাসে । কারো তিরস্কারের ভয়ে কিংবা কারো দ্বারা পুরুস্কৃত হওয়ার জন্য নয় । উন্নত জীবনের স্বপ্ন দর্শনে উদ্বুদ্ধ করতে এবং নৈতিক ও আদর্শবান মানুষ হিসেবে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলার জন্য মুলত শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় যোগ দেওয়া উচিত।
লেখক :: সহকারী শিক্ষক, সদরঘাট বালিকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়